স্কুলছাত্রীদের টিপ্পনী: ২০ ‘রোমিও’র মাথা মুড়িয়ে শাস্তি! ন্যাড়া মাথায় বাড়ি ফিরল অভিযুক্ত যুবকেরা

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় ঘটল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। কুমারপুর ভোলানাথ মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ছাত্রীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল—স্কুলে যাওয়া–আসার পথে এলাকার কয়েকজন যুবক নিয়মিত তাঁদের উত্ত্যক্ত করত। কখনও উড়ে আসত টিপ্পনী, কখনও অশালীন মন্তব্য। এমনকি প্রতিবাদ করলে ছাত্রীদের হুমকিও দেওয়া হত। ফলে আতঙ্কে দিনের পর দিন পড়তে হচ্ছিল স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের।
অভিভাবক এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ বহুবার সতর্ক করলেও তাতে কোনও লাভ হয়নি। বরং ধীরে ধীরে যুবকদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়ছিল। অভিযোগ, প্রতিদিন সকাল ও দুপুরে স্কুলগেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত এই যুবকেরা। বাইক নিয়ে ঘোরাফেরা করত এবং ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করত। কারও কারও বিরুদ্ধে আবার বাইক থেকে হাত টেনে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
এলাকায় পুলিশের টহলদারি কমলেই এঁদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যেত। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, কেউ প্রতিবাদ করলেই তাঁরা ভয় দেখাত। ফলে অভিভাবকরা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। শেষমেশ দীর্ঘ আলোচনা ও বৈঠকের পর গ্রামবাসীরা নিজেদের হাতেই ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল—এই যুবকদের বুঝিয়ে দেওয়া যে এ ধরনের কাজ কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
একদিন যখন অভিযোগকারী ছাত্রীদের সামনে আবার ওই যুবকেরা জটলা করছিল, তখন গ্রামের কয়েকজন অভিভাবক ও বাসিন্দা মিলে তাঁদের পাকড়াও করেন। এরপর তাঁদের সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় এক ক্ষৌরকারের দোকানে। সেখানে ২০ জন যুবকের মাথা সম্পূর্ণ ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। ন্যাড়া মাথায় বেরিয়েই বাইকে চেপে তাঁরা লজ্জায় বাড়ির পথে রওনা দেন। যাঁরা এত দিন স্টাইলের জন্য হেলমেট পরতেন না, তাঁরাও সেদিন মাথা ঢাকার আগেই বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন।
বেলডাঙার তৃণমূল বিধায়ক হাসানুজ্জামান শেখ বলেন, “অভিভাবকদের উচিত নজর রাখা—তাঁদের ছেলেরা সারাদিন কী করছে। তাতে সমাজের পরিবেশ সুস্থ থাকবে।” তিনি জানান, মেয়েদের স্কুলের সামনে কিছু যুবকের আড্ডা দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তাই প্রশাসন নিয়মিত পদক্ষেপ করে।
আরও পড়ুন :
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মহম্মদ মুস্তফা জানান, “অনেক দিন ধরে কিছু যুবক স্কুল শুরু এবং ছুটির সময় মেয়েদের লক্ষ্য করে অশালীন মন্তব্য করছিল। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছিলাম। তবুও তারা না থামায় এলাকাবাসীই শেষমেশ শাস্তি দিয়েছে।”
বর্তমানে স্কুলের সামনে পরিস্থিতি শান্ত। ছাত্রীরা ও তাঁদের অভিভাবকেরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। স্থানীয়রা আশা করছেন—এই শাস্তির পর আর কেউ ছাত্রীদের দিকে আঙুল তোলার সাহস করবে না।
